বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে; একে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘উপহার’ বলেছে সরকার।সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের হারানো সম্মান জাতির কাছে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়।শেখ হাসিনা বলেন, “সেই ভাতা যখন আমরা চালু করি, তখনকার সময়ের প্রেক্ষিতে আমরা মাসিক ৩০০ টাকায় শুরু করেছিলাম, আজকে তা ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে আমি মনে করি, এই সময়ে ১২ হাজার টাকা কিছুই না।“আমি ইতিমধ্যে আমাদের কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের মিটিং ছিল। এতগুলো ভাগ ভাগ না করে আমি বলেছি, এটা আমার মনে হয় আমাদের মাননীয় মন্ত্রীও ব্যবস্থা নেবেন বা আমরা আমাদের তরফ থেকে নেব। আমরা নিচের যে কয়টা স্লট আছে, সেগুলো এক জায়গায় নিয়ে এসে ২০ হাজার টাকা করেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করব।”তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সময় লাগবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারণ বাজেটে সব কিছু ব্যবস্থা করতে একটু সময় লাগবে। তবে এটা আমরা করে দেব।”তিনি জানান, এখন শহীদ পরিবার মাসে ৩০ হাজার টাকা করে, যুদ্ধাহত পরিবার ২৫ হাজার করে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদের পরিবার ৩৫ হাজার টাকা করে,বীর উত্তম খেতাবধারীরা ৩০ হাজার টাকা করে, বীর বিক্রম খেতাবধারীরা ২০ হাজার টাকা করে এবং বীর প্রতীক খেতাবধারীরা ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা পায়।এই ভাগগুলো না রাখার পরিকল্পনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “হয়ত যারা বীরশ্রেষ্ঠ তাদেরটা একটু আলাদা থাকবে বা বীর উত্তম তাদের আলাদা আছে। কিন্তু আমি মনে করি বাকি সবাইকে এক সাথে দেওয়াটা ভালো। কারণ সবাই তো মুক্তিযুদ্ধই করেছে।”অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ থাকবে না, তারা কষ্ট করে থাকবে, এটা অন্তত আমি যখন সরকারে আছি, তখন হতে পারে না।“মুক্তিযোদ্ধারা ভিক্ষা করে খাবে, ঘর থাকবে না, তাদের ছেলেমেয়েরা অবহেলিত হবে, এটা আমি মানতে পারি না। কারণ তাদের অবদানেই তো আমাদের আজকের স্বাধীনতা। আজকে আমরা যে যা কিছু হচ্ছি, যত সম্পদ যে যা কামাচ্ছি, সবই তো তাদের অবদানের জন্য।”নতুন প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে, সেজন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিত্তশালী হতে পারতেন না যদি এই মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন না করত। কাজেই আপনাদের যার যার এলাকায় যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধা অবহেলিত থাকে, অবশ্যই আপনারা নিজের উদ্যোগে তাদের সমস্যাটা দূর করা,তাদের জীবনটা যাতে ভালো হয় সেই ব্যবস্থাও নেবেন।”ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে থেকে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধারা।একই সময় ঢাকা, গাজীপুর,ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম,পাইকগাছা, খুলনা,হাইমচর, চাঁদপুর,বড়লেখা, মৌলভীবাজার প্রান্তে স্থানীয় সংসদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন।
Leave a Reply