COVID-19 রোগ পোল্ট্রি, পোষা, গবাদি প্রাণি থেকে মানুষে ছড়ানোর কোন সম্ভবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এমডিভি এক্সপার্ট ডা. এম. মুজিবুর রহমান। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টোরাল অধ্যয়নরত গবেষক ড. মোঃ জহরুল ইসলামের একটি ফেসবুক পোস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান প্রাণি বা পাখি থেকে করোনা ছড়ায় না।
COVID-19 রোগ সৃষ্টকারী জীবাণুর অফিসিয়াল নাম ‘SARS-CoV-2’ ভাইরাস যা মানুষ থেকে মানুষে শ্বাসপ্রশ্বাস বা হাঁচি-কাশিতে সৃষ্ট ড্রপলেট বা এরোসলের মাধ্যমে ছড়ায়। SARS-CoV-2 ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত একজন মানুষই অন্য মানুষকে সংক্রমণ করার একমাত্র মাধ্যম। তাই গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল, হাস-মুরগির মাধ্যমে মানুষে COVID-19 রোগ সংক্রমণের কোন সম্ভাবনা নাই।
একটি প্রশ্ন সবার মনে আসতে পারে, SARS-CoV-2 ভাইরাস তো প্রথমে প্রাণিদেহ থেকেই মানুষে এসেছে তাহলে এখন কেন বলা হচ্ছে প্রাণি থেকে মানুষে আসার কোন সম্ভবনা নেই?
একথা সত্যি, SARS-CoV-2 ভাইরাস প্রথমে প্রাণি থেকেই মানুষে এসেছে কিন্তু সেটি ছিল একটি বিরল বিবর্তনীয় ঘটনা।
এ ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য নিয়ে করা সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এরা মানব দেহকেই প্রধান পোষক হিসেবে বেছে নেয়ার জন্য বিবর্তিত হতে অনেক সময় নিয়েছে যাকে বলে ‘Natural selection in Human’ (১)। গবেষণায় আরো পাওয়া গেছে, ভাইরাসটির আদিপুরুষ বসবাস করত বাদুড় (Bat) এবং বনরুই (Pangolins) জাতীয় প্রাণিতে, চীনের উহান প্রদেশে মানুষ কর্তৃক বন্যপ্রাণি ভক্ষণের ফলস্বরুপ দুর্ঘটনাবশত বন্য প্রাণিতে থাকা করোনাভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে এবং খুব অলৌকিকভাবে দ্রুত বিবর্তনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণি থেকে আসা ভাইরাসটি তার রূপ পরিবর্তন করে ভয়াবহ এক নতুন রূপ ধারণ করে যা এক মানুষের দেহ থেকে আরেক মানুষের দেহে প্রবেশের কৌশল রপ্ত করে (১, ২)।
মানব দেহে স্থায়ী বসবাস শুরুর পর থেকে এ ভাইরাসের বর্তমান রূপ তার আদি রূপ থেকে আলাদা । এটি যেকোন ভাইরাসের ক্ষেত্রে খুব বিরল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যাকে “Host-Jump” বা “Cross species spill-over”, বলে । এরপর থেকেই এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের প্রধান পোষক মানুষ। তাই একজন সংক্রমিত মানুষই অন্য মানুষে এ ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান উৎস। তাই গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল, হাঁস-মুরগীর মাধ্যমে গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল, পোল্ট্রি থেকে মানুষে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন।
পোষা কিংবা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করা কুকুর-বিড়াল না থাকলে চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশটা ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে না। এদের কারো মাধ্যমে মানুষে করোনভাইরাস ছড়ায় না। জনসচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থা (OIE), বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (BVA) প্রভৃতি সংগঠন এ বিষয়ে তাদের বার্তা স্পষ্ট করছে।
বাংলাদেশের জন্য করোনা মহামারীর চেয়ে খাদ্য মহামারীর ভয় এখন অনেক বেশি। না জেনে পোল্ট্রি, পোষা, গবাদি প্রাণি থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর মত ভয়াবহ যে গুজব ছড়িয়ে আছে, তার পরিণাম বেশ স্পষ্ট। দেশের সিংহভাগ প্রাণিজ মাংসের যোগান আসে পোল্ট্রি থেকে। শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান এ শিল্পের সাথে জড়িত।
মিথ্যা গুজবের কারণে শুধু পোল্ট্রি শিল্পে নয়, ডেইরি সহ অন্যান্য প্রাণি খামারিদের যে ক্ষতি শুরু হয়ে গেছে তা চলতে থাকলে দেশে নেমে আসবে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়। অজ্ঞতার কারণে এরকম আরো অনেক গুজব সমাজে মহামারী আকার ধারণ করেছে। করোনা মহামারীতে দেশের আপামর জনতা যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, একইভাবে এসব গুজব ঠেকাতেও আমাকে, আপনাকে পাশে থাকতে হবে। অন্যথায় লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক খামারী দেউলিয়া হয়ে যাবে যার ভার সবাইকে বহন করতে হবে ।
Leave a Reply