হোমকোয়রান্টিনের দিনে আমরা বড়রা না হয় ভিডিও গেইম খেলে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং করে, বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নের উপর কোর্স করে, গান শুনে বা রান্নাবান্না করে সময় কাটিয়ে দিচ্ছি কিন্তু আমাদের বাড়ির শিশুদের মনের ব্যাপারটা কি ভেবে দেখেছি একবারও?
কারণ এই বয়সটা তো শিশুদের শেখার সময় নিজের মনের বুঝ দেয়ার তো নয়! তাহলে কেমন ঝড় বয়ে চলেছে তাদের মনের মধ্যে যখনই তাদের মনে হচ্ছে যে, আজ আর স্কুলে যাওয়া হবে না, বন্ধুদের সাথে হই হুল্লোড় করা হবে না, ছবি আঁকা হবে না! ক্লাসের শিক্ষকের কাছ থেকে ‘very good’ নামের উৎসাহ ব্যঞ্জক শব্দটা তার খাতায় পাওয়া হবে না! এই ছোট ছোট জিনিশ গুলোই তো শিশুদের বড় হওয়ার পথে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে অথচ সেগুলোই এখন না পাওয়ার হতাশা হয়ে তাদের মনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে এমনটাই জানালেন আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় এর শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেন্নি রাডেস্কি (jenny Radesky)। তিনি আরও বলেন, শিশুদের মানুষিক বিকাশ সব চেয়ে বেশি হয় যখন তারা তাদের প্রিয় মানুষদের সহচার্যে আসে এবং সেটা এই করোনাভাইরাস এর সঙ্গরোধের মত সময়ে কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন শিশুদের মন খুবই স্পর্শকাতর এবং তারা তাদের সমস্ত শরীর নিয়ে বাঁচে। তাই এই পরিবর্তন খুবই আকস্মিক এবং কঠিন হবে তাদের জন্য। কারণ বাস্তব জীবনে কারোর সাথে মেলামেশা করা এবং ভিডিও কলের মধ্যে দূর থেকে দেখা এক জিনিশ নয়।
সুতরাং আমাদেরকে খুব সতর্কতার সাথে এই মুহুর্তকে অতিক্রম করতে হবে। আমাদের কে খেয়াল রাখতে হবে শিশুদের মানুষিক বিকাশের জন্য খোলা পরিবেশ দেয়া না গেলেও তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানচর্চা যেন ব্যাহত না হয়। তাদের কে ঘরোয়া খেলাধুলায় সাহায্য করতে হবে, গল্পের বই পড়ে শোনাতে হবে বা তাদের হাতে বিভিন্ন ছোটদের জন্য প্রকাশিত বই তুলে দিতে হবে। যাদের বাগানের প্রতি আগ্রহ আছে তাদের সেই কাজে উৎসাহ দিতে হবে, ছবি আঁকতে চাইলে তাদের সেই সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে এবং তাদের কাজের প্রশংসা করতে হবে। এই বদ্ধ জীবনের বদ্ধতা যেন কোন ভাবেই তাদের সুন্দর মনের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে আমাদের সেই বিষয়টাতে নজর রাখতে হবে। রাডেস্কি এমনটাই জানিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হল, আমাদের ভিতরে অনেক বাবা মাই আছেন যারা নিজেরাই অবসাদ গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তারা কী করবেন? হ্যা, আমাদের ভিতরে এমন অনেকেই আছেন যারা নিজেরায় এই আবদ্ধ জীবনের বিরুপ প্রভাবে অষ্ঠাগত জীবন যাপন করছেন তাদের জন্য সন্তানের খেয়াল রাখা এত সহজ হবে না। সেই জন্যই আমাদের নিজের সাথে সাথে চারপাশের মানষের খেয়ালও রাখতে হবে। নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা কে নিজের মধ্যে আদানপ্রদান করতে হবে। তাহলেই আমরা এই অচলাবস্থার থেকে পরিত্রাণ পাব। এমনটাই বললেন রাডেস্কি।
পরিশেষে বলা যেতে পারে, এই আলাপচারির উদ্দেশ্য হল আমরা যারা দায়িত্বশীল তারা যেন নিজেদের কাজটা ঠিক ভাবে পালন করি। সকল বাবা-মা, দাদা-দাদি বা পরিচর্যাকারীর কাছে যেসব বাচ্চারা বড় হচ্ছে তাদের কে নিজের চোখের মাধ্যমে বিশ্বকে তুলে ধরতে হবে এবং সকলের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
তথ্যসুত্রঃ মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় ব্লগ।
Leave a Reply