সংসদে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ সংসদে কথা বলতে না দেওয়ার মাধ্যমে অধিকার ক্ষুন্নের অভিযোগ নাকচ কর দিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আপনি যতবারই পয়েন্ট অব অর্ডারে সময় চেয়েছেন, আমি না বলিনি। আমি অপেক্ষা করতে বলেছি। বলেছি, আমাদের হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম রয়েছে, যেগুলো দৈনিক কার্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আপনি সংসদ অধিবেশনে সারাক্ষণ উপস্থিত থাকতে চাননি। আপনি চলে গেলেন। সেটা আপনার বিষয়। আপনি আমার কথা অনুযায়ী যদি শেষ অবধি থাকতেন, অবশ্যই আমি আপনাকে সময় দিতাম। তাহজিব আলম সিদ্দিকীকে সেইভাবে সুযোগ দিয়েছি।সংসদের একাদশতম তথা শীতকালীন অধিবেশনে আজকের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি এমপি অধিকার ক্ষুনের অভিযোগ তুললে অথিবেশনে সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এসব কথা বলেন।এ সময় স্পিকার আরো বলেন, একটি বিষয় আপনাকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, এটা কোভিডকালীন সময়। পেনডামিকের মধ্যে সংসদ পরিচালনা করছি। কাজেই এসব বিষয় মাথায় রেখে সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সংসদ পরিচালনা করতে হয়। সামগ্রিকভাবে এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। ১০ দিন আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে যে কথাটি বলেছেন, তা যুক্তিসঙ্গত নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আপনি কার্যপ্রণালী বিধি দেখাচ্ছেন, বিধি অনুযায়ী দৈনিক এজেন্ডাভুক্ত বিষয়গুলোকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। তারপরে আমি অনির্ধারিত আলোচনায় যেতে পারি। কাজেই আপনার কোনও অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়নি। আপনাকে দৈনিক কাজ শেষে যে সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম, সেটা আপনি গ্রহণ করেননি। সেটা আপনার বিষয়।এরআগে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সংসদ আজ ১০ দিন হলো চলছে। আমি বহু চেষ্টা করেছি সমসাময়িক কথা বলার জন্য। সবসময় দেখেছি, বিরোধী দলকে অনির্ধারিত আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু ১০ দিনের মধ্যে সুযোগ দেওয়া হয়নি। কথা বলার সুযোগ দেওয়া না হলে সংসদে বিরোধী দল কী কাজ করবে?তিনি আরো বলেন, আমি প্রত্যেক দিন হাত তুলেছি। আপনি বলে দিলেন, সব আলোচনা শেষ হওয়ার পর দেবেন। কার্যপ্রণালী বিধিতে এ ধরনের কিছু নেই। সংসদে বিরোধী দলের কণ্ঠকে স্তব্ধ না করে দিয়ে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের স্পেস দিতে হবে। কথা বলার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে গত দুই মাসে যে উত্তেজনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। আলেমদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার মতো যে অশালীন কথাবার্তা বলা হয়েছে, তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত।তিনি বলেন, বৈদেশিক রিজার্ভের কথা এই সংসদে বলা হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি ঋণ কত? কত লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, সেই বিষয়গুলো আলোচনার মধ্যে নেই। গণমাধ্যমে দেখলাম, নতুন শিশু জন্ম নিলে ৩০ হাজার টাকার বেশি মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশ থেকে এনে মেগা প্রকল্প বানানো হচ্ছে। জাতীয় উন্নয়নের নামে জাতীয় লুটপাট হচ্ছে। বিদেশে পাচার হচ্ছে।তিনি আরো বলেন, সংসদে আমরা কথা বললে তার কাউন্টার দেয় যাদের আপনারা (সরকার) বিরোধী দলে বসিয়েছেন তারা। বিরোধী দল আর সরকারি দল বাইরে তো একাকার। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধী দলের কোনও প্রার্থী আছে? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, অন্যান্য জায়গায় মহাজোটের শরিকরা একসঙ্গে ভোট করছে। সংসদের বাইরে এক চরিত্র ভেতরে এসে কি ভিন্ন চরিত্র করা সম্ভব? একসঙ্গে মধ্যরাতে ভোট করলেন। এখন তাদের বিরোধী দলের চেয়ারে বসালেন। এটা কি হয়? ‘নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি।’ সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।তিনি আরো বলেন, সংসদে সত্য বলতে গেলে সরকারি দল ও মহাজোটের সদস্যরা অসন্তুষ্ট হন। তবে আমি সত্য কথা বলবোই।এদিকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের কঠোরভাবে প্রতিবাদ করেছেন বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, বিএনপির হারুন সাহেব পয়েন্ট অব অর্ডার মানে বোঝেন? কত ধরায় পয়েন্ট অব অর্ডার দিতে হবে সেটা উনি জানেন কি না আমি জানি না। তিনি আরো বলেন, সংসদে আমাদের নিয়ে বকাবকি করা হয়েছে। কার্যপ্রণালী বিধির যে কমিটি রয়েছে সেই কমিটির আমি একজন সদস্য। সুতরাং আমি মনে করি আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য হারুন সাহেব পয়েন্ট অব অর্ডারের কথা বলেছেন। আমি ওনাকে সময় দিয়েছিলাম। বিরোধী দল উনারা নিজেরাই দাবি করেন আবার যখন সময় লাগে তখন আমার কাছে সময় নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক বসন্তকাল কিন্তু বসন্তকালই। উনারা নির্বাচনে আসুক না আসুক আমরা কিন্তু সংসদেই। একবার নয় তিন বার। উনারা যতই বলুক আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের যে ঐক্য, আমরা ঐক্যের মধ্যে নির্বাচন করেছি বিরোধী দলে বসেছি ওনারা (আওয়ামী লীগ) সরকারি দলে বসেছেন। ওনাদের এটা বিষোদাগার হয়ে গেছে। আজকে উনারা এরশাদ সাহেবকে গালাগাল করেন। এরশাদ সাহেব যখন দুটি বাড়ি দিয়েছিল গুলশানে একটি আর ক্যান্টনমেন্টে একটি তখন খুব আনন্দ হয়েছিল? তখন মনের আনন্দে ধেই ধেই করে নেচেছিলেন না?
Leave a Reply