লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী। একইসঙ্গে তিনি বর্তমান মেয়র ও আগামীকাল অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিনের পক্ষে কাজ করতে বলেছেন।নুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মেয়র নির্বাচনের সঙ্গে যেহেতু উন্নয়নের সম্পর্ক রয়েছে, সেহেতু নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। সব ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বলবেন, আমার ভোটটি নৌকার প্রতীকের বোতামে চাপ দিয়ে দেন। তারপর বুথে গিয়ে কাউন্সিলর পদে ভোট দেবেন নিজের পছন্দের প্রতীকে। যারা নৌকায় ভোট দেবেন না, তারা ভোটের পরদিন বুঝবেন।’গত বুধবার থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে পথসভা ও কর্মী সভায় এসব কথা বলেন তিনি। তার এমন বক্তব্যের ভিডিও দ্য ডেইলি স্টার’র কাছে রয়েছে।প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ রামগতি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর সেকান্দর সফি একাডেমি মাঠে ২৩ মিনিটের বক্তব্যে নুর উদ্দিন বলেন, নৌকার মেয়র প্রার্থীর ভোট ওপেন দিতে হবে। নৌকার প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন মেজুর বিজয় হলে আগামীতে রাস্তা-ঘাট, টিউবওয়েল, মসজিদ, মন্দিরের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম চেনেন। তাই তিনি নির্বাচিত হলে ব্যাপক বরাদ্দ আনা হবে।কাউন্সিলর প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাড়ির সবাইকে নিয়ে নৌকায় ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবেন। যারা নৌকায় ভোট দেবেন না তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। ভোট দিতে গিয়ে যারা এদিক-সেদিক তাকাবে তাদের চিনে রাখার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।তিনি কাউন্সিলর প্রার্থীদের নৌকার সমর্থকদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। যদি এর ব্যতিক্রম হয় তবে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হলে আওয়ামী লীগ তার দায়-দায়িত্ব নেবে না এবং যারা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে প্রচারণা করছেন না তাদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা সার্বক্ষণিক ভোটারদের ও কাউন্সিলদের নজরদারিতে রাখবেন। ইভিএম এমন এক সিস্টেম যে কেউ নৌকার বাইরে ভোট দিলে ধরা যায়। চট্টগ্রাম নির্বাচনে এমন এক ভোটারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রামগতিতেও যদি এমন হয় এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ যদি সে খবর পায় তাহলে কী হতে পারে আমি জানি না। যারা নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করবে তাদের এজেন্ট দুপুরের পর আর কেন্দ্রে থাকবে না।বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কমিশনার ভোট হবে নিরপেক্ষ। জনগণ যাকে চাইবেন তিনিই হবেন কাউন্সিলর।আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ‘আমি তো সব কথা ভাঙ্গি কইতে পারি না। যারা ভোট দেবে না তারা ভোটের পরদিন বুঝবেন।’৭নং ওয়ার্ডের আরেক পথসভায় তিনি বলেন, বিএনপি মেয়র প্রার্থী রামগতি পৌরসভার মেয়র থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন, অনিয়ম, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। মেয়র থাকাকালে তিনি পৌরসভার উন্নয়নে কোনো কাজ করতে পারেননি। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল।বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে।তিনি বলেন, ধানের শীষ, স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট কারা হয় তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেব। বিএনপি প্রার্থী ও তার অনুসারীদের সঙ্গে বোঝাপড়া হবে ১৪ তারিখের পরে। বিস্ফোরক, পেট্টোল বোমা, নাশকতা মামলায় তাদের ফাঁসানো হবে। মামলা রেডি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের মামলা হয় ১৯৯৬ সালে, তবে ২০১৪ সালে জামায়াত-বিএনপি জ্বালাও, পোড়াও ও নাশকতা করেছে সে মামলা এখন করা যাবে।তার এমন বক্তব্যের ব্যাপারে বিএনপি প্রার্থী সাহেদ আলী পটু বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো পরিবেশে নেই। আওয়ামী লীগ নেতার সন্ত্রাসীমূলক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যে আমি, আমার কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত। এখানে যে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই সেটা তো জেলা আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারা যে কোনো অবস্থায় ভোট ডাকাতি করবে।’এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি বলে দাবি করেন তিনি। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।স্বতন্ত্র প্রার্থী (নারিকেল গাছ প্রতীক) আবি আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দেশে ভোট নেই। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বিধি লঙ্ঘন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এলাকায় অবস্থান করে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। এতে করে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।’জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা ভোটারদেরকে নানা প্রকার হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন পথসভায় বলছেন ইভিএমে ভোট দিলে কাকে ভোট দেওয়া হয়েছে তা দেখা যায়। এমন বক্তব্য শোনার পর ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভয়ে অনেক ভোটার কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন না।’রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ছয় জন, কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য সম্পর্কে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. নাজিম উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘কীভাবে, কোন অবস্থানে থেকে তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন তা আমার বোধগম্য নয়।’তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে নয়টি ওয়ার্ডে ১০টি কেন্দ্র রয়েছে। তবে একটি প্রতিষ্ঠানের দুইটি কেন্দ্র রয়েছে। নয়টি কেন্দ্রে নয় জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, প্রতি কেন্দ্রে সাত জন পুলিশ, নয় জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি দুই প্লাটুন কোস্টগার্ড, তিনটি টিমে র্যাবের ২৪ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।’এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিইনি। বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ভিডিওটি এডিট করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। তারাই ইভিএম-এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
Leave a Reply