প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘কলঙ্কজনক অধ্যায়’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে পনেরই ফেব্রুয়ারি। আমরা একটু স্মরণ করাতে চাই ১৯৯৬ সালে এই পনেরই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে একটা ভোটাবিহীন নির্বাচন হয়েছিল।”সেই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুরু করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের ঘটনা দিয়ে।“১৯৭৫ এর পর জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে… সে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এদেশের মানুষের শুধু যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করেছে তা না, বাংলাদেশের অধিকার, ভাতের অধিকারও কেড়ে নিয়েছিল, বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নিয়েছিল। এদেশের মানুষকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা করেছিল।“১৫ ফেব্রুয়ারি তার (জিয়াউর রহমান) স্ত্রী খালেদা জিয়া একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। সে কতগুলো দল তৈরি করে করেছিল। ২ শতাংশ ভোটও পায়নি। সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ডেপ্লয় করে দিয়ে জনগণের ভোট চুরি করে। চুরি করে সে দাবি করে- সে আবারও প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তা মেনে নেয়নি। তীব্র আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের মধ্যে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে, অর্থাৎ ৩০ শে মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়।”প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডিপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডিশেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আজও রয়ে গেছে। সেই দিন আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকেও জীবন দিতে হয়েছিল। আমি তাদেরকেও আজ স্মরণ করি।”আওয়ামী লীগ দেশে ‘জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে’ পেরেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারছি।… বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে সম্মান অর্জন করেছি। এই অর্জনের পেছনে অনেক ত্যাগ, অনেক তিতিক্ষা রয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। আমি তাদেরকেও আজকের দিনে স্মরণ করি।”জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশের যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “১৫ অগাস্টের পর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। শুধু সংবিধান না, আমাদের আর্মির রুলস অ্যাক্টও লঙ্ঘন করা হয়। যার ফলে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে, আর জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি, তারাই মূলত ক্ষমতায় চলে আসে। জনগণের ভোটের অধিকারটুকু পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়।”ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য এবং কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন।এছাড়া একই সময় ঢাকা, গাজীপুর, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম, পাইকগাছা, খুলনা, হাইমচর, চাঁদপুর, বড়লেখা, মৌলভীবাজার থেকে স্থানীয় সাংসদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
Leave a Reply