করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছরের পবিত্র হজ নিয়ে সৌদি আরব এখনও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে নানাসূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, পুরোপুরি বাতিল না করে সীমিতসংখ্যক হজযাত্রীকে হজপালনের অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দেশটি।
এর আগে সার্স এবং মার্স প্রাদুর্ভাবের সময়েও সৌদি আরবে হজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে হজের আয়োজন করা সৌদি সরকারের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরবে ইতোমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ বাড়ছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে। জেদ্দায় নতুন করে আবার কারফিউ জারি করা হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে ৭১টি মসজিদের জামাত।
এমতাবস্থায় সৌদি আরবকে সামগ্রিক পরিস্থিতি সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ৩১ মার্চ হজ পালনেচ্ছুকদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত হজের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলেন দেশটির হজ ও উমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বেনতেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হজ বন্ধের গুজব ছড়ানোর প্রেক্ষিতে সৌদি মন্ত্রী এ কথা বলেছিলেন। এ ঘোষণার আড়াই মাসেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ।
এরই মাঝে একে একে চলতি বছরের হজযাত্রা বাতিল করছে বিভিন্ন দেশ। আরও কয়েকটি দেশ হজযাত্রা স্থগিতের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
সিঙ্গাপুর
সবার আগে সিঙ্গাপুর ঘোষণা করেছে, এবার তার দেশের নাগরিকদের হজপালনে পাঠাবে না।
ইন্দোনেশিয়া
২ জুন বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়া করোনা পরিস্থিতিতে হজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইন্দোনেশিয়া থেকে সর্বাধিক হজযাত্রী (দুই লাখের বেশি) সৌদি আরব গমন করেন।
থাইল্যান্ড
ইন্দোনেশিয়ার পর একই কারণে থাইল্যান্ডের মুসলমানদের জন্য এ বছর হজ স্থগিত করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছর হজের জন্য মোট ৮ হাজার মুসলমান নিবন্ধন করেছিল। তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ৫ হাজার ৭শ’ জন পরবর্তী বছর হজপালনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে এক হাজার জন হজযাত্রা বাতিল করেছেন। চলতি বছর মাত্র ১ হাজার ৩শ’ জন হজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় দেশটি হজযাত্রা বাতিল করেছে।
মালয়েশিয়া
করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কারণে মালয়েশিয়াও তার নাগরিকদের হজে পাঠাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির ধর্মমন্ত্রী জুলকিফলি মোহাম্মদ আল বাকরি বৃহস্পতিবার (১১ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনের এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আশা করি হজযাত্রীরা ধৈর্যশীল হবেন এবং সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।’ প্রতি বছর কয়েক হাজার মালয়েশিয়ান হজ করতে সৌদি আরব যান। কোটা পদ্ধতির কারণে দেশটির অনেকেই জীবনে একবার হজপালনের সুযোগ পান। মালয়েশিয়ার হজ বোর্ড জানিয়েছে, তাদের ৩১ হাজার ৬০০ জন মুসল্লিকে হজের অনুমতি দিয়েছিল সৌদি আরব।
ব্রুনেই
এ ছাড়া হজযাত্রা বাতিল করেছে ব্রুনেই সরকারও। তুরস্কের গণমাধ্যম আনাদুলুর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজকীয় ব্রুনাইয়ের হজযাত্রীরা আসন্ন হজে অংশগ্রহণ করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও বৃহস্পতিবার (১১ জুন) পর্যন্ত সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত না আসায় ব্রনাই সরকার আসন্ন হজের প্রস্তুতিমূলক যেসব কাজ করছিল তা স্থগিত করেছে।
নাইজেরিয়া
আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ নাইজেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ এবারের হজে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে মিডলইস্ট মনিটরের রিপোর্টে বলা হয়েছে। কারণ সৌদি সরকার এখনও হজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে এসব দেশ প্রস্তুতি নিতে পারছে না। মরক্কো, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ জানিয়েছে, যদি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হজ বিষয়ে সৌদি সরকার তাদের সিদ্ধান্ত না জানায় তাহলে তারা হজে অংশ নেবেন না।
এদিকে হজের বিষয়ে বাংলাদেশ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। তবে হজের চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশনে খুব সাড়া মেলেনি। এখনও পূর্বনির্ধারিত কোটার অর্ধেক পূরণ হয়নি। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জন হজপালন করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দফায় দফায় সময় বাড়ানোর পরও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৪৫৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ১৪২ জন (মোট ৬৪ হাজার ৫৯৯) চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজের বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে ভাবা হচ্ছে এবং বেশ কিছু দিকই বিবেচনায় রয়েছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে হজ নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। ওই প্রতিবেদনের সৌদি সরকারের হজ বিষয়ক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে এবারের হজ আয়োজন করার একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে আছে। এ ছাড়া এবারের হজ বাতিলের প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়েছে। দু’টি প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। তবে মুসল্লিদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। করোনার কারণে এমন দৃশ্য দেখা গেছে কাবা চত্বরে, ছবি: সংগৃহীত হজের সিদ্ধান্ত হলেও বহির্বিশ্ব থেকে শতকরা ১০ ভাগ কিংবা ২০ ভাগ মুসল্লিকে হজপালনের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও শিশুদের জন্য এ সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া সবাইকে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে উমরাপালন বন্ধ রয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই অর্থাৎ ৯ জিলহজ হজ শুরু হতে পারে। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্তত ২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম হজ করতে সৌদি আরব যান।
Leave a Reply