পঞ্চগড়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা এখন তেঁতুলিয়া ছাপিয়ে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে নেট দুনিয়ায়। যার অপরুপ দৃশ্য ঘুরছে ফেসবুকের পাতায় পাতায়। অনেকেই নানা রকম প্রশংসায় ভাসাচ্ছে বরফ আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। এই পর্বতশৃঙ্গের নজর আটকে যাওয়া মনোরম দৃশ্য দেখতে কে না চায়? তাই, করোনা পরিস্থিতিতেও পর্যটকদের ভিড় এখন উত্তরের সীমান্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। তবে কেউ কেউ না যেতে পারলেও কাঞ্চনজঙ্ঘার রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নিচ্ছেন, কেউবা ফেসবুকে ছবি ও লেখার মধ্যদিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য ট্রল করছেন।দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকে নিজেদের টাইমলাইনে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্যের সাথে কৃত্রিমভাবে নিজেদের ভালো লাগা শেয়ার করছেন। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ট্রল করতে গিয়ে কেউ কেউ ফটোশপ করে নিজেকে জুড়ে দিচ্ছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার সাথে, আবার কেউ কেউ সৌন্দর্যমণ্ডিত কাঞ্চনজঙ্ঘাকে তুলে আনছেন দালান-কোটার ঢাকার শহরে। আর যারা ইতিপূর্বে সেখানে গিয়েছেন তারা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঘিরে পুরনো স্মৃতি আওড়াচ্ছেন।সুদীপ্ত সাঈদ নামে একজন লিখেছেন, ‘আহ! কাঞ্চনজঙ্ঘা! অভূতপূর্ব…. তোমার দেখা পেয়ে আমার জীবন ধন্য..!’ রাকিব কিশোর নামে আরেকজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা আমার কাছে আর দশটা সাদা পাহাড়ের মতোই, আলাদা কিছু না। কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা যে একটা আবেগের নাম সেটা বুঝেছিলাম প্রথম যেবার সান্দাকফু যাই; হোটেলের দুইটা ভারী লেপ গায়ে জড়িয়ে তীব্র বাতাসের মধ্যে ভোর সাড়ে চারটায় কাঁপতে কাঁপতে বাইরে এসে দেখি ফ্রান্সের এক লোক গায়ে সামান্য একটা জ্যাকেট জড়িয়েই একটানা তাকিয়ে আছে উত্তরের দিকে! তার কাছে গিয়ে আমিও উত্তরের দিকে তাকালাম, একটা কালো অটল পাহাড়ের সারি ওই দূরে। সেখান থেকে চোখ না সরিয়েই লোকটা জানালো এটা তার ৫১ তমবার সান্দাকফু আসা!’মাহবুব মোর্শেদ নামে একজন লিখেছেন, ‘পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রায় শীতেই দেখা যায়। ১৯৯৫ সালে আমি প্রথম দেখেছি। তখন পঞ্চগড়ে থাকতাম। প্রথমবার সকালে বাসার বারান্দা থেকে দেখতে পেয়ে বেশ ভাল লেগেছিল।’ সাংবাদিক মাহতাব হোসেন তারই লেখা উপন্যাস থেকে লিখেছেন, ‘পূবের আলো এসে ঠিকরে পড়তেই ঝকঝমকিয়ে উঠল কাঞ্চনজঙ্ঘা। আহা সৌন্দর্য, আহা; একদিকে সূর্য উঠছে আর অন্যদিকে গনগনে আগুনে উত্তপ্ত হয়ে থাকা সোনার মতো পাহাড়চূড়া, স্বর্ণাভ কাঞ্চনজঙ্ঘা। চোখ ভিজে গেল সমুদ্রের। বুকের ভেতর প্রবাহিত হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যে যে প্রবাহের কম্পমান অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই, কাঞ্চনজঙ্ঘার এমন রূপ প্রকাশের বিশেষণ জানা নেই সমুদ্রের। হঠাৎ করেই মনে পড়ল শান্তার মুখ। কেন? সেটাও জানে না সমুদ্র। সামনে সোনায় মোড়ানো কাঞ্চনজঙ্ঘা, এক বিস্ময়কর সৌন্দর্য দৃশ্যমান। এমন সৌন্দর্যের কাছে নতজানু হয়ে কৃতজ্ঞতা জানানো যায়। প্রায় দশমিনিটের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান ছিল। এরপরে মেঘে মিলিয়ে যায়। হারিয়ে গেল কাঞ্চনজঙ্ঘা। মনে হয় আকাশের গায়ে ত্রিমাত্রিক ছবি এঁকে দিয়ে গিয়েছিল কেউ তারপর সেই ছবি সাদাকালো রঙ দিয়ে ঢেকে দিলো। বড়ই বিচিত্র।’ফিরোজ আল সাবাহ নামে একজন তেঁতুলিয়া গিয়ে লিখেছেন, ‘হেমন্ত! গতকাল হরাইজনের কাছাকাছি তারকাদের ঝিকিমিকি দেখেই মনে হচ্ছিলো দেখা দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘা! হলোও তাই। দোটানায় না ভুগে মাঝরাতেই তেঁতুলিয়া আসাটা ব্যর্থ হয়নি।’ জিহাদী ইসলাম নূর নামে আরেকজন সেখানে বেড়াতে গিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গতকাল খুব স্পষ্টভাবেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গিয়েছিল। এটা তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথেই। আজ আকাশ অনেক মেঘলা তাই দেখার সম্ভবনা খুবই কম। আগামীতে কখন দেখা যাবে সেটা আসলে নির্ভর করছে আবহাওয়ার উপর। যদি আপনারা কেউ আসতে চান তাহলে অবশ্যই আবহাওয়া সম্পর্কে কারো কাছে জেনে নিয়ে তবেই আসবেন।’উল্লেখ্য, দুই মেরু রেখার বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। আর সূর্যের সব রঙেই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে থাকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপ। প্রথমে টুকটুকে লাল রঙ দেখা গেলেও সেই রং লাল থেকে পাল্টে গিয়ে কমলা রঙের হয় তারপর হলুদ রঙ হয়ে সর্বশেষ সাদা দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ সৌন্দর্য।কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে অনেকেই যেতে চায় তেঁতুলিয়া। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। এখন সেই কাঙ্খিত সময়। এই সময় বেড়াতে যেতে পারেন উত্তরের দুয়ার বলে খ্যাত হিমালয় কন্যা আমাদের তেঁতুলিয়ায় নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে।চলতি সপ্তাহে ভোর বেলা হাঁটতে হাঁটতে বা সকালের চা খেতে খেতে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পর্যটকরা। আকাশে মেঘ আর কুয়াশা না থাকায় বর্তমানে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা মিলছে এই বরফের পাহাড়ের। প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুর দিকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও এবার অক্টোবরের শেষের দিকে দেখা গেছে অপরুপ কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য।
Leave a Reply