ভারতের গণমাধ্যমের একাংশ আর সামাজিক মাধ্যমে দুটো ঘটনার তুলনা টানছেন অনেকেই। ২০১৯-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি আর ২০২০ এর ৫ মে।
প্রথম ঘটনাটি ছিল পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর “সার্জিকাল স্ট্রাইক” আর দ্বিতীয়টি যেদিন চীনা ফৌজ লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা আর পাংগং হ্রদের ধারে ভারতীয় এলাকায় প্রবেশ করেছিল।দুটি দিনের তুলনা টেনে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম লিখছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার গোটা সরকার বালাকোট হামলার দিন উচ্চকিত হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু তারা চীনা বাহিনীর অগ্রসর হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন চুপ করে থেকেছেন।
এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই।
কারণ যে সময়ে চীনের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হলেন সেই সময়েই বুধবার নেপালের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সেদেশের নতুন ম্যাপ সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হল – যাতে ভারতের কিছুটা অংশও রয়েছে বলে নয়া দিল্লির অভিযোগ।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
চীনের সঙ্গেও মতবিরোধ ছিলই। কিন্তু নেপালের মতো ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রও এখন কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে যে কেন গত কয়েক বছর ধরে নিকটতম প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে?
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অশ্বিনী রায় বলছিলেন, এই অঞ্চলের প্রতিটা দেশই বোঝে যে চীন-ভারত সম্পর্কের ওপরেই নির্ভর করছে তারা নিজেরা কতটা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারবে।
“নেপাল এই সুযোগটা আগে থেকেই নিয়েছে। এখন আরও বেশি করে সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে,” তিনি বলেন।
তিনি বলছিলেন, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক ভারতের থেকে অনেক উন্নত।
“তারা বেশ আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই এই অঞ্চলে কাজ করে, তারই ফলশ্রুতি এখন দেখা যাচ্ছে নানা দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আমরা প্রকৃত অর্থেই নিজেদের জমি হারাচ্ছি,” অশ্বিনী রায় বলেন।
ভারতে গত ক’দিন ধরে ব্যাপক চীন বিরোধী বিক্ষোভ চলছে – চীনের পতাকা পোড়ানো হচ্ছে – চীনা পণ্য বয়কট করার আহ্বান দেওয়া হচ্ছে।
নেপালের সঙ্গে বিবাদ
যখন এরকম একটা চীন বিরোধী মনোভাব ভারতের সাধারণ মানুষের একাংশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, সেই সময়েই আরেক প্রতিবেশী নেপাল তাদের দেশের নতুন মানচিত্র পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নিয়েছে – যাতে ভারতের কিছুটা অংশও রয়েছে বলে নয়া দিল্লির অভিযোগ।
নেপালের মতে, নতুন মানচিত্রর ভিত্তি হচ্ছে ১৮১৬ সালের সুগাউলি চুক্তি। কিন্তু ভারত সেই দাবি নাকচ করে দিয়ে আসছে।
মে মাসের মাঝামাঝিতে বিতর্কিত ভূখণ্ড কালাপানি আর লিপুলেখকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেপালের সরকার।
অথচ ভারতের সব থেকে বন্ধু রাষ্ট্র বলে মনে করা হয় যাদের, তাদের মধ্যে নেপাল অন্যতম। কিন্তু তারাও ভারতের সঙ্গে একটা বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে।
“ভারত উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তবে চীন অনেক বেশি আগ্রাসী,” বলছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কাকলি সেনগুপ্ত।
“যদি নেপালের নতুন মানচিত্র প্রকাশের ঘটনাটা দেখি, সেখানেও চীনের প্রভাব কাজ করে থাকতে পারে,” যোগ করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা
Leave a Reply