বাজারমূল্যের দিক থেকে ভারতের বৃহত্তম কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ পেয়েছেন মুকেশ আম্বানির তিন সন্তান—ইশা, আকাশ ও অনন্ত আম্বানি। ব্লুমবার্গের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, এঁরা যে ভবিষ্যতে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কান্ডারি হতে যাচ্ছেন, এই নিয়োগ তারই ইঙ্গিত।
মুকেশ আম্বানি অবশ্য এখনই দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন না, যদিও তাঁর স্ত্রী নীতা আম্বানি পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করে মানবকল্যাণে সময় দিচ্ছেন। তিন সন্তানের নিয়োগ সম্পর্কে মুকেশ আম্বানি বলেছেন, ‘এরা যোগ্যতা অর্জন করেছে’। নীতা আম্বানি অবশ্য রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজ ক্ষমতাবলে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ বৈঠকে অংশ নেবেন। আম্বানির তিন সন্তান এখন গোষ্ঠীর অন্যান্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আছেন।
তিন সন্তানের পর্ষদে নিয়োগের বিষয়ে আবেগতাড়িত মুকেশ আম্বানি বলেন, ‘এই দিন আবেগপূর্ণ; ১৯৭৭ সালে আমার পিতা যেদিন আমাকে পর্ষদে নিয়োগ দিয়েছিলেন, সেই দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আজ তিন সন্তানের মধ্যে আমার ও আমার পিতার ছায়া দেখতে পাচ্ছি; ওদের মধ্যে ধীরুভাই আম্বানির আগুন আছে।’ মুকেশ আম্বানি আরও বলেন, ‘ওদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য করে গড়ে তুলতে চাই; চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে চাই ওদের। আগামী পাঁচ বছর আমি আরও উদ্যম নিয়ে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে যাব।’ সম্প্রতি কয়েক বছর ধরেই উত্তরাধিকার পরিকল্পনা করছেন মুকেশ আম্বানি। ৩১ বছর বয়সী আকাশ রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের চেয়ারম্যান; তাঁর জমজ বোন ৩১ বছর বয়সী ইশা রিলায়েন্সের খুচরা ব্যবসার দেখাশোনার পাশাপাশি জিও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের পরিচালনা পর্ষদে আছেন; আর ২৮ বছর বয়সী অনন্ত জ্বালানি ব্যবসায় জড়িত।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বলেছে, শেয়ার হোল্ডারদের অনুমোদনের পর এই তিনজন যেদিন থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, সেদিন থেকেই তাঁদের মেয়াদ শুরু হবে। মুকেশ আম্বানি ১৯৭৭ সালে ২০ বছর বয়সে রিলায়েন্সের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেন। এরপর ২০০২ সালে পিতা ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর পর তিনি রিলায়েন্সের প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে, যদিও তিনি ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই দুই পদে থাকার অনুমোদন পেয়েছেন। কোম্পানি আইন অনুসারে, প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকা ব্যক্তির বয়স ৭০ বছর পেরিয়ে গেলে শেয়ার হোল্ডারদের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। গতকাল সোমবার মুকেশ আম্বানির ঘোষণার পর এটা পরিষ্কার, তিনি উত্তরাধিকার পরিকল্পনা করছেন। তবে ধীরুভাই আম্বানির ব্যবসা নিয়ে দুই ভাই মুকেশ ও অনিলের দ্বন্দ্ব ছিল। মুকেশ আম্বানির ভাগে পড়ে রিলায়েন্স; অনিল পান টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি ও আর্থিক সেবার ব্যবসা। তবে পরবর্তী সময়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়, যার বদৌলতে টেলিকম ও আর্থিক ব্যবসায় আবারও ফিরে আসেন মুকেশ আম্বানি।