নারীদের মতো পুরুষেরও জন্মনিরোধক পিলের জন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অবিরাম প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ব্রিটেনে ৬০ বছর আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে নারীদের পিল। তবে নতুন খবর হলো এবার আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে পুরুষদের জন্যও জন্মবিরতিকরণ পিল বাজারে বিকোবে।সাধারণ চোখে মনে হয়, পুরুষদের প্রজননতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষাকৃত সহজ। নারীদের চাইতেও এখানে জটিলতা কম। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। একজন পুরুষের জৈবিক উদ্দেশ্য হলো তার জিনগুলোকে ছড়িয়ে দেয়া, বংশ বিস্তার করা। সারাদিনে একজন প্রজননে সক্ষম পুরুষ প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার শুক্রাণু উৎপাদন করেন। জৈবিক ক্রিয়ার সময় নির্গত করেন ২৫০ মিলিয়ন শুক্রাণু। এই বিপুল পরিমাণ শুক্রাণুর কৃত্রিমভাবে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা কার্যকরভাবেই কঠিন। অন্যদিকে প্রাকৃতিকভাবে একজন নারী প্রতি মাসে মাত্র একটি অথবা দুটি ডিম্বাণু নিঃসরণ করেন।বর্তমানে পুরুষদের কাছে জন্ম নিয়ন্ত্রণের দুটি বিকল্প রয়েছে- কনডমের ব্যবহার এবং স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ অস্ত্রোপচার। সেখানে সার্জন শুক্রাণু বহন করা টিউবটি কেটে ফেলেন বা বন্ধ করে দেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জোয়ার নয়া মোড় নিচ্ছে এখন। নতুন এক ধরণের গর্ভনিরোধক জেল এখন আবারো আশা দেখাচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই জেলটি ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দম্পতির মাঝে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।জেলটি পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন এবং সেজেস্টেরোন এসিটেটের সংমিশ্রণ (যার বাণিজ্যিক নাম নেস্টোরন)। নেস্টোরন টেস্টিসে শুক্রাণুর উৎপাদন এমন প্রক্রিয়াতে কমিয়ে ফেলে যে তা পুরুষের লিবিডোকে (যৌনক্রিয়া) প্রভাবিত না করেই শুক্রাণুর উৎপাদন কার্যকরভাবে প্রতিহত করে।এডিনবরা গবেষণা দলের অধ্যাপক রিচার্ড এন্ডারসন বলেন, আমরা এখন পাঁচজোড়া দম্পতির ওপর এই পরীক্ষাটি পর্যবেক্ষণ করছি যারা গত এক বছর যাবত কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই জন্মবিরতিকরণ জেল ব্যবহার করে চলেছেন। যদিও পুরোপুরি সিদ্ধান্তে আসতে আরো বছর তিনেক লেগে যাবে। সমীক্ষার লক্ষ্য ৪৫০ জোড়া দম্পতি তাদের প্রধান জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি হিসেবে এই জেল গ্রহণ করবেন।যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই জেলের পরীক্ষামূলক ব্যবহার পরিচালনা করছেন ড. ক্রিস্টিনা ওয়াং। তিনি লস এঞ্জেলস বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন পর্যবেক্ষক। ক্রিস্টিনা বলেন, পুরুষ জন্মবিরতিকরণ ঔষধ প্রয়োগের তিনটি সুপ্ত পদ্ধতি রয়েছে -পিল হিসেবে, জেলের সাথে মিশিয়ে, এবং মাসিক ভিত্তিতে ইঞ্জেকশান প্রয়োগ। তিনটিরই ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা রয়েছে।এদিকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ যে ট্রায়াল পরীচালনা করছেন, যা অনেকটাই প্রতিবর্তনযোগ্য বন্ধ্যাকরণ অস্ত্রোপচার (reversible vasectomy)। এটি হলো একপ্রকার শুক্রাণু নিরোধক ইনজেকশান যা গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করবে ১৩ বছর পর্যন্ত। ৩০০ এর অধিক পুরুষের ওপর এটি প্রয়োগ করা হয়ে গেছে। এই সমীক্ষার প্রধান ডা. রাধে শ্যাম শর্মা বলেন, আমাদের প্রক্রিয়াতে গর্ভনিরোধ সফলতার হার শতকরা ৯৭.৩ ভাগ। এবং এটি পুরোপুরি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন।শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির এন্ড্রলজির অধ্যাপক এলান পেসি তাই আগত পুরুষ পিল নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘পুরুষদের রীতিমত এই পিলের ব্যবহার নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। কবে কে ভেবেছিল পুরুষদের পাচনতন্ত্রগুলোকেও কার্যকর গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।’তবে নিয়ম করে গর্ভনিরোধক পিলের সরবরাহ খানিকটা অযৌক্তিক ঠেকেছে তার কাছে। ‘প্রতি মাসে ইনজেকশান গ্রহণ করতে মনে হয় না পুরুষেরা সকলে রাজি হবেন’, যোগ করেন এলান ।জেল বা ইনজেকশন- ধরন যাই হোক না কেন, পুরুষদের গর্ভনিরোধক ঔষধ যে নারীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা তুলে ধরতে যাচ্ছে সেটি তো নিশ্চিত। তাছাড়া এটির ব্যবহার নিয়ে নারী তার সঙ্গীর ওপর যথাযথ আস্থা রাখতে পারছেন কিনা সেটিও দেখার বিষয় ভবিষ্যতে।সূত্র: মেইল অনলাইন
Leave a Reply