ছয় সপ্তাহ ধরে চলা নাগোরনো-কারবাখ নিয়ে সামরিক বিরোধের অবসান ঘটাতে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও রাশিয়া। এদিকে এক প্রতিক্রিয়ায় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনিয়ান চুক্তিটিকে তার দেশ ও জনগণের জন্য ‘অবিশ্বাস্যভাবে বেদনাদায়ক’ বলে অভিহিত করেন। নাগোরনো-কারবাখ অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত, কিন্তু ১৯৯৪ সাল থেকে আর্মেনীয়দের দখলে ছিল। চলতি বছরে কয়েকবার যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হলেও বারবার এর ব্যত্যয় ঘটে। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ চুক্তি অনুসারে সংঘাতের সময় কেড়ে নেওয়া নাগোরনো-কারবাখ আজারবাইজানের কাছেই থাকছে। এ ছাড়া কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংলগ্ন আরও কিছু অঞ্চল থেকে আর্মেনিয়া সরে আসতে সম্মত হয়েছে। রাশিয়া এবং আজারবাইজান দুই দেশই এই চুক্তি সাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ববহ’ বলে উল্লেখ করেন। এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠকে আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, “স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় বিবৃতি সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইলহাম আলিয়েভ এক টুইট বার্তা বলেন, এই চুক্তি ঐতিহাসিক। সেই সঙ্গে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এদিকে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনিয়ান জানান চুক্তিটি তার ও আর্মেনিয়ার জনগণের জন্যে অবর্ণনীয় বেদনাদায়ক। তিনি আরও জানান, বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থির বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এমন পরস্থিতিতে এইটি সর্বোত্তম সমাধান। আর্মেনিয়ার দখলে থাকা দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শুশা( আর্মেনিয়ানদের কাছে শুশি নামে পরিচিত) আজেরি বাহিনী দখল করে নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই চুক্তি সাক্ষরিত হল। এদিকে সোমবার( ৯ নভেম্বর) আজারবাইজান জানায়, তারা আরো কয়েক ডজন জনপদ দখলে নিয়েছে। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, এ চুক্তিতে যুদ্ধবন্দি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সব ধরনের অর্থনৈতিক ও পরিবহন চুক্তি থেকে বাধা তুলে নেওয়া হবে। এদিকে এই তুরস্ক শান্তি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে জানা গেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন চুক্তির অধীনে আগামী ৫ বছরের জন্যে আর্মেনিয়া ও নাগোর্নো কারাবাখের সীমান্তে ১ হাজার ৯৬০ জন রাশিয়ান সেনা শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হবে। এদিকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ জানান, চুক্তির আওতায় তুরস্কের সেনাসদস্যদেরও শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হবে। এদিকে এই চুক্তির মাধ্যমে আর্মেনিয়া তাদের দখলে থাকা কারাবাখের বেশ কিছু অঞ্চল ফিরিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে আজেরি সেনাবাহিনী স্টেপানাকার্ট পর্যন্ত আগাবে না বলে জানা গেছে। এদিকে এই শান্তিচুক্তি হওয়ার পর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কার্ফিউ স্বত্তেও হাজার হাজার মানুষ বিজয় উদযাপন করতে রাস্তায় নেমে পরেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরার প্রতিবেদক ওসামা বিন জাভিদ। এদিকে শান্তিচুক্তি সাক্ষরের পর আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভেনে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ফেসবুক পোস্টের বিশ মিনিট পর এক দল বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে। তারা জোড় করে সরকারী ভবন এবং সংসদ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরা। তারা আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয় দেশই সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দুটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়। কয়েক দশক ধরে নাগোরনো-কারবাখ অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ চলছে। গত জুলাইয়ে সীমান্তে দুপক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে আজারবাইজানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন। এরপর থেকে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
Leave a Reply