সাধারণ ছুটিতেও স্বল্প পরিসরে চলছে ই-কমার্স ব্যবসা। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং খাবার বিক্রির সাইটগুলো ছাড়া অন্য ই-কমার্সগুলোর মূলত ব্যবসা করার সুযোগ নগণ্য। গাড়ি বিক্রি করার ই-কমার্সের এখন কোন চাহিদা নেই বললেই চলে। লকডাউনের এই সময়ে নিজেদের ই-কমার্স সাইট ব্যবহার করে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মাস্ক সংগ্রহ করলো রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ম্যাভেন অটোস। মাত্র ৩ দিনে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ হাজার ৮০০ টি কেএন৯৫ মাস্ক কেনার অর্থ ম্যাভেন অটোসের ই-কমার্স সাইট থেকে সংগ্রহ করে। এরসঙ্গে আরো প্রায় ২ হাজার ২০০টি মাস্কের মূল্য যোগ করে মোট চার হাজার মাস্ক সারাদেশে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উপহার দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ই-কমার্স ব্যবসায় এভাবে মাস্ক সংগ্রহের বিষয়ে ম্যাভেন অটোস এর স্বত্তাধিকারী আশফাক ইবনে আব্দুল আওয়াল বলেন, করোনার প্রভাব যখন দিনকে দিন বাড়তে শুরু করে, তখন চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্কের সরবরাহ না থাকায় এই সময়টাতে আমরা নিজস্ব ই-কমার্স সাইটটিকে মাস্ক সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আমাদের গ্রাহকদের দুইটি অফার দেই। ‘বাই ওয়ান ডোনেট ওয়ান’ অফারে একজন ক্রেতা একটি মাস্ক কিনলে আমরা আরেকটি মাস্ক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় যারা কাজ করছেন তাদের পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। এই অফারে আমরা প্রায় ১ হাজার মাস্কের ফরমায়েশ গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে আমরা প্রতিটি মাস্কে ২৮ টাকা করে ভর্তুকি প্রদান করি।
অন্য আরেকটি অফারে গ্রাহক সরাসরি মাস্কের মূল্য প্রদান করতে পারবেন। এই অফারে প্রায় ৮০০ মাস্কের মূল্য সংগৃহীত হয়। পরবর্তীতে ম্যাভেন অটোস এর পক্ষ থেকে আমরা আরো দুই হাজার ২০০ টি মাস্ক নিজেদের তরফ থেকে করোনা যোদ্ধাদের প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেই। চার হাজার মাস্কের ফরমায়েশ পাঠিয়ে চীন থেকে আমরা কেএন৯৫ মাস্কগুলো সংগ্রহ করি। আন্তর্জাতিকভাবে কার্গো পরিবহন সীমাবদ্ধ থাকায় মাস্ক পেতে কিছুটা বিলম্ব হয়। মাস্ক হাতে পাওয়ার পর থেকে দেশের রাজধানীর হাসপাতালসহ সারা দেশে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এই উপহার পাঠাতে আমরা কার্যক্রম শুরু করে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির স্বত্তাধিকারী।
তিনি আরী বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এই মাস্কগুলো বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমি বিশ্বাস করি, দেশের সব ব্যবসায়ীরা যদি নিজ নিজ স্থান থেকে দেশের এই সংকটময় সময়ে এগিয়ে আসেন, তাহলে আমরা সহজে এই দুর্যোগকালীন সময় অতিক্রম করতে পারবো।
২৩ এপ্রিল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ‘মাস্ক উপহার’ প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা এবং সহযোগিতা প্রদান করেন বিএসএমএমইউ এর পাবলিক হেলথ এবং ইনফরমেটিক্স বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা ডা. কে.এম. তৌহিদুর রহমান।
ইতোমধ্যে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধী ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট মাতুয়াইল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, এভারকেয়ার হাসপাতাল ও আবেদা মেমোরিয়াল হাসপাতালেসহ আরো কয়েকটি হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে এই মাস্কগুলো হস্তান্তর করা হয়। রাজধানী শেষ হলে এই কার্যক্রম সারাদেশে পরিচালিত হবে বলেও জানান আশফাক ইবনে আব্দুল আওয়াল। এই ক্যাম্পেইনে ডিজিটাল পেমেন্ট পার্টনার এসএসএল কমার্জ।
১৭৮ টাকা মূল্যের কেএন৯৫ মডেলের এই মাস্কগুলো করোনা ভাইরাস থেকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম। চিকিৎসকদের জন্য মাস্কের চাহিদা চলমান থাকাতে ইতোমধ্যে ম্যাভেন অটোস এর সাইটে ‘বাই ফাইভ ডোনেট ফাইভ’ নামে নতুন একটি ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে এই ক্যাম্পেইন চলমান থাকবে বলেও জানান আশফাক ইবনে আব্দুল আওয়াল।
প্রসঙ্গত, ম্যাভেন অটোস মালয়েশিয়ার ইঞ্জিন অয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ট্যাং চং এর একমাত্র পরিবেশক। রিকন্ডিশনড গাড়ি বিক্রির পাশাপাশি ম্যাভেন অটোস এর স্পেয়ার পার্টস বিক্রি এবং সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। এক ছাদের নিচে সব সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর এই প্রতিষ্ঠানে ই-কমার্স সেবা, সারাদেশে অটোমোবাইল সরঞ্জাম ডেলিভারি এবং মাসিক কিস্তিতে সেবা গ্রহণ এবং পার্টস কেনার সুবিধা রয়েছে।
Leave a Reply